চাটমোহরের বোঁথরে মনোবাসনা পূরণে চড়ক গাছে দুধ ঢালছেন ভক্তরা। ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবারে ছবিটি তোলা হয়েছে।
Please complete verification to access this content.
১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার পাবনার চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে শুরু হয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত চড়ক পূজা। চাটমোহর পৌর সদরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মরা বড়াল নদের পারে বটবৃক্ষের শীতল ছায়ায় প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী এ পূজা শুরু হয়। অন্যান্য বছর এ পূজা উপলক্ষ্যে বৈশাখী মেলা বসলেও এবার মেলা বসছে না। স্বাস্থ্য বিধি মেনে পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছর হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষেরা দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি ভারত থেকে ও এই পূজা করতে ও মেলা দেখতে আসতেন। করোনা পরিস্থিতিতে এবার মেলা বন্ধ রেখে কেবল পূজার আনুষ্ঠানিকতা করছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পূজা প্রাঙ্গনে স্বাস্থ্য বিধির ব্যাপারে প্রথম থেকেই তৎপর রয়েছেন।
বোঁথর চড়ক পূজা ও মন্দির কমিটির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ দাস জানান, তিন দিন ব্যাপী এ পূজার প্রথম দিন ১৩ এপ্রিল মন্দিরে মহাদেব স্থাপন করা হয় এবং পুকুর থেকে চড়ক গাছ তুলে পূজা স্থানে (চড়ক বাড়িতে) এনে স্থাপন করা হয়। ১৪ এপ্রিল পূজার আনুষ্ঠানিকতা ও চড়ক গাছ ঘোড়ানো হবে। ১৫ এপ্রিল প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। স্থাপন করা চড়ক গাছ পূজা শুরুর ৭ দিন পর পুনরায় পার্শ্ববর্তী পুকুরে রেখে আসা হবে। তিনি আরো জানান, অতীতে স¦াভাবিক সময়ে ৩ দিন ব্যাপী মেলা বসতো এখানে। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রকমারী পন্যসামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে আসতেন দোকানদাররা। নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, যাত্রা, পুতুলনাচ, সার্কাস হতো এ পূজা ও মেলা উপলক্ষ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসবের পরিধি কমে গেছে। আর এ বছরতো কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে ।
চড়ক মেলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বোঁথড় গ্রামের সঞ্জিত সাহা কিংশুক জানান, বাপ-ঠাকুরদার কাছে এবং এলাকার প্রবীনদের মুখে শুনেছি প্রায় ছয়-সাতশো বছর আগে থেকে বোঁথরে চড়ক পূজা ও মেলা হয়। প্রথম চড়কগাছ প্রতিস্থাপন করেছিলেন মাখন সান্যাল নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী। আসাম থেকে কিনে আনা তার কাঠের মধ্যে চড়ক গাছের আগমন ঘটেছিলো এখানে। আর মাখনের স্ত্রীকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেবতা মহাদেব জানিয়ে দেন চড়ক হয়ে তিনি এসেছেন। তাকে স্থাপন করে যেন পূজা দেওয়া হয়। সেই থেকে স্যানাল আর আচার্য্য পরিবার পূজা শুরু করেন হলদার আর সূত্রধরদের নিয়ে। ৩ দিনের আনুষ্ঠানিকতায় ভক্তরা চড়কগাছ পুকুরের পানি থেকে তোলেন, ভক্ত অনুসারীরা তাদের মনবাসনা পূরনের আশায়, মঙ্গলার্থে চড়ক গাছে তেল, দুধ, চিনি ঢালেন, ভরন চালান দেওয়া হয়, ভরন নাচ হয়, কালী নাচ হয়, হাজরা ছাড়া হয়, ১৪ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির তিথিতে চড়ক গাছ ঘোড়ানো হয়। এই ১৪ এপ্রিল দিনটাই বেশী জাকজমকপূর্ন হয়। পরের দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়। এবার কেবল পূজার আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে। কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে কর্তৃপক্ষ কোন দোকান পাট বসতে দেয়নি।
চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্তী জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চড়ক পূজার আনুষ্ঠানিকতা করা হচ্ছে। এ পূজা উপলক্ষ্যে অন্যান্য বছর মেলা বসলেও এবার মেলা বসেনি। কোন দোকান ও বসতে দেয়া হয়নি। বোঁথর ছাড়াও চাটমোহরের রেলবাজার এলাকার কুবিরদিয়ার দাসপাড়ায় চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।