jhenukmedia.com
ঢাকা, শুক্রবার , ১৬ মে ২০২৫



  1. সর্বশেষ

চাকরির প্রলোভনে ১২০০ জনকে নিঃস্ব করেছে মুন্নি

প্রতিনিধির নাম
২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

Link Copied!

Too Many Requests from Your Network

Please complete verification to access this content.


Click to Verify

নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সালমা আক্তার মুন্নির ছিলো উচ্চাভিলাসী মনোভাব। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে এক হাজার ২৩৯ জন্য চাকরিপ্রত্যাশিকে নিঃস্ব করেছে ২১ বছর বয়সী এই তরুণী। অবশেষে র‌্যাবের জালে ধরা পড়েছেন মুন্নি।

বুধবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে সালমা আক্তার মুন্নি নামের কথিত এই চাকরিদাতা নারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে খিলক্ষেত এলাকায় তার কথিত কোম্পানি ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডে’ থেকে একটি কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসেট, ভুয়া নিয়োগপত্র, ভিজিটিং কার্ডসহ অনলাইনে দেয়া বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট জব্দ করে র‌্যাব।

আজ বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি বলেন, এইচএসসি পাশের পর হাবিবুর রহমান নামে একজন প্রতারকের মাধ্যমে ২০২০ সালে এনএইচ সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান চালু করে তারা। পরে ‘বিডি জবস বিডি’ নামে একটি পেইজ খুলে সেখানে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তারা। পরে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক হাজার ২৩৯ জন চাকরিপ্রত্যাশির কাছ থেকে ১১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। তারা আকর্ষনীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছিল। এমন ঘটনায় অনেকে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়।

এরপরই র‍্যাব-১ ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরপরই খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ এর অফিসে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নি জানায়, সে সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘বিডি জবস বিডি’ নামে তার একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারা সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

যেভাবে প্রতারণা করা হতো

অনলাইনে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে কেউ সিভি পাঠালে অফিস থেকে ফোন করে চাকরি প্রার্থীদের একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে যেতে বলা হতো। এরপর কথিত ইন্টারভিউ নিয়ে অফিসের ফরম বাবদ ৫০০ টাকা নেয়া হয়। ইন্টারভিউ শেষে তাদের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে চাকরিতে যোগদানের আগে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা জামানত নেয়া হতো। এছাড়া পদ অনুযায়ী মাসিক বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া হতো।

পরবর্তীতে সেখানে যোগ দিলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো, প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে। নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতেই তাদের বেতন দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হতো। এ সময় ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয় বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলেও তা আর দেয়া হতো না। এভাবে গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২৩৯ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ১১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানি চললেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে নিয়োগ করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী কারিশমা আক্তার। এসএসসি পাসের পর চাকরি খুঁজছিলেন। প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, অনলাইনে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠান। দু’দিন পরেই তাকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করা হয়। বলা হয়, আপনি প্রাথমিকভাবে আমাদের কল সেন্টারে চাকরির জন্য সিলেক্টেড হয়েছেন। এরপর ইন্টারভিউয়ের জন্য তাকে ডাকা হয়। সেখানে গেলে ফর্মপূরণ (আবেদনপত্র) বাবদ প্রথমে পাঁচশ টাকা নেয়া হয়। এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও সাড়ে তিনহাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেয়ার পর পরবর্তীতে তিনি আর চাকরি পাননি। কারিশমা ততক্ষণে বুঝে যান, তিনি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। কারিশমার মতো আরও অনেকে চাকরির নামে প্রতারিত হয়ে র‌্যাবে অভিযোগ করেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, অভিযুক্ত সালমা আক্তার মুন্নি’র বাড়ি মাদারীপুরে। চাকরি প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করেই মূলত তার প্রতারণা চলছিল।

পলাতক হাবিবুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার সালমার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাকে ধরতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে খুব দ্রুতই তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন