Please complete verification to access this content.
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের বিয়ের খবরটি বিশ্বব্যাপি সংবাদমাধ্যমেই ছিল এক বড় ঘটনা। আর ফেসবুক-টুইটারের মত সামাজিক মাধ্যমে এটি ছিল অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে বিয়ের খবর ছবিসহ শেয়ার করেন মালালা। এতে জানানো হয়, ব্রিটেনের বার্মিংহ্যাম শহরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মালালা ইউসুফজাই ও আসের মালিকের ‘নিকাহ’ সুসম্পন্ন হয়েছে। আসের মালিক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা।
টুইটার বার্তায় মালালা জানান, ‘আসের এবং আমি একত্রিত হয়েছি জীবনের জন্য। সামনের দিনগুলোতে একসাথে পথ চলার জন্য আমরা বেশ উদ্বেলিত।’ মালালা বলেন, এই দিনটি তার জীবনের একটি মূল্যবান দিন।
বিয়ের এ খবর দ্রুত সারা বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে হাজার হাজার মন্তব্য।
মূলতঃ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর অধিকাংশই অভিনন্দনসূচক বার্তা, যাতে মালালার সুখী বিবাহিত জীবন কামনা করে তার জন্য উচ্ছ্বসিত শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতটিও ঘটেছে। আর সেটাই বিশেষ করে নজরে পড়ার মত।
‘বিয়ে করতে হবে কেন?’ গত জুন মাসে ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ভোগ’কে দেয়া সাক্ষাতকারে মালালার সেই উক্তিটি বার বার উদ্ধৃত হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সেই পাতাটির স্ক্রিনশটও দিয়েছেন।
তাতে মালালা বলেছিলেন, ‘আমি এখনো বুঝতে পারি না যে মানুষকে বিয়ে করতে হবে কেন। যদি আপনি একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করতে চান, তার জন্য কেন বিয়ের দলিলে সই করতে হবে, কেন এটা শুধুই একটা পার্টনারশিপ হতে পারবে না?’
জুন মাসে করা মালালার এই উক্তি প্রকাশিত হয়েছিল ভোগ সাময়িকীর জুলাই সংখ্যায়। তার পর ছয় মাস পার না হতেই তিনি নিজেই বিয়ে করে ফেললেন।
ব্যাপারটা টুইটারে অসংখ্য ‘বিস্মিত’ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তাকে নিয়ে চলছে ট্রেল। আর এসব প্রতিক্রিয়ার বেশিরভাগই নেতিবাচক।
টুইটার/ফেসবুক ঘেঁটে ধারণা পাওয়া যায়, এসব প্রতিক্রিয়ার একটা বড় অংশই এসেছে দক্ষিণ এশীয় ব্যবহারকারীদের দিক থেকে।
ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টুইটার ব্যবহারকারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতরা- তারাই মূলত জড়িয়েছেন এ বিতর্কে।
‘ভণ্ডামির আরেক নাম মালালা’: এরা মালালাকে আক্রমণ করেছেন বিয়ে বিষয়ে তার উক্তির জন্য। তাদের মন্তব্যগুলোর মূল প্রশ্নটা এই রকম- দৃশ্যতঃ বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পর ছয় মাস না পেরোতেই মালালা নিজে বিয়ে করলেন কেন?
‘টিপিক্যাল ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’- মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ নামে একজন, যার নামের পাশে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যাচ্ছে।
পাকিস্তান থেকে শাখান নামে একজন উর্দূতে টুইট করেছেন, যার অর্থ- ‘মালালা এক সময় দাড়ি ও বিয়ে দুটোরই বিরোধী ছিলেন, আর এখন সে দাড়িওয়ালা একজনকে বিয়ে করেছে, আমাদের বোকা বানিয়েছে।’
লিভিংডেডএক্স নামে একজন টুইট করেছেন, ‘যদি আমি ঠিক মনে করতে পারি, কেউ একজন কয়েকমাস আগে নিকাহর সমালোচনা করে পার্টনারশিপকে শ্রেয়তর মনে করেছিল…আহ, ভন্ডামি কাকে বলে?’
কুরাতথকুয়াসার নামে একজন উর্দুতে টুইট করেছেন, ‘আপনি যদি পার্টনারশিপ করেই থাকতে পারতেন তাহলে বিয়ে করার ইচ্ছে হলো কেন?’
মিস্টারসি-স্মোকার নামে একজন টুইট করেছেন, ‘মালালা, আপনি বিয়ে করলেন কেন? এটা ছাড়াও তো আপনি পরিবার গড়তে পারতেন। এই মেয়ে কয়েক মাসে আগেই নিকাহর নিন্দা করছিল। কত বড় ভণ্ডামি!’
বিলাওয়াল নামে একজনের টুইট, ‘ইনিই কি সেই যিনি কয়েক মাস আগে বিয়ে না করে একসাথে থাকাকে উৎসাহিত করেছিলেন?’ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন রাজীআইয়ার নামে একজন।
তিনি বলেছেন, ‘মালালা বলেছিলেন, মানুষকে কেন বিয়ে করতে হয় আমি বুঝি না, এখন তিনি তা না বুঝেই বিয়ে করেছেন। ভণ্ডামির আরেক নাম মালালা।’
প্রণবথধীর নামে একজন যার নামের পাশে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের পতাকা দেখা যাচ্ছে, মন্তব্য করেন ‘হিপোক্রিসি যদি আর্ট হয়, তাহলে মালালা হচ্ছেন তার পিকাসো।’
‘সমস্যা আপনারই, মালালার নয়’ তবে এ বিতর্কে মালালার পাশে যে কেউই দাঁড়াননি- তা মোটেও নয়। বিনা শাহ নামে পাকিস্তানি লেখক ও কলামিস্ট টুইটারে মন্তব্য করেছেন, ‘মালালা বিয়ে করতে চায় না, লোকে বিচলিত। মালালা বিয়ে করেছে, তাতেও লোকে বিচলিত। সমস্যা সম্ভবত আপনারই, মালালার নয়।’
অনেকে বলেছেন, মালালা ভোগকে দেয়া সাক্ষাতকারে যাই বলে থাকুন, তার তো সেই মত পরিবর্তনের অধিকারও আছে।
এরা ওই একই সাক্ষাতকারে মালালার আরেকটি উক্তি শেয়ার করছেন, যেখানে মালালা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়া পর্যন্ত তিনি ভাবতেন তিনি কখনো বিয়ে করবেন না। কিন্তু তখন তিনি বোঝেননি যে মানুষ চিরকাল একরকম থাকে না, তার পরিবর্তন হয়।
ট্রুথ ফর এসএসআর নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘সবারই মত পরিবর্তন করার স্বাধীনতা আছে। আমাদের উচিত তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করা।’
সাদিয়া বশির নামে পাকিস্তান থেকে টুইট করেছেন, ‘মালালার সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আমিও বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। কিন্তু তার কিছুকাল পরই আমি বিয়ে করি।’