২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কারণে প্রায় তিন মাস অচল ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেই প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
কমিটি দিয়েছে ছাত্রদল
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও গত বছরের ২৪ জুলাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বুয়েটে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আসিফ হোসেনকে আহ্বায়ক, আলী আহমদকে সদস্যসচিব ও ফয়সাল নূরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠিত সেই কমিটির দুই সদস্য হলেন নওরোজ রহমান ও মুসাওয়ার আহমেদ। তাঁরা সবাই বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত তাঁরা মানেন না।
এই কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটিতে থাকা ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। নোটিশের জবাবে কেউ বলেছেন যে তাঁরা বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী নন, কেউ আবার বলেছেন যে সম্মতি ছাড়াই তাঁদের ছাত্রদলের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউই বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী নন। ফলে তাঁদের বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আমরা বলতে পারি, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর আছে। বুয়েট ক্যাম্পাসে তাঁরা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের প্রচেষ্টা আছে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।’
ছাত্রলীগ কমিটি ভাঙেনি
আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ১১ নেতাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। আবরার হত্যার পর থেকে বুয়েটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনের কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বুয়েট কমিটি ভাঙেনি ছাত্রলীগ।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলোকে বিদায় করার দাবি উঠতে পারে, কিন্তু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।’একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাত মাসের মতো বুয়েটের হল খোলা ছিল। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা হলে ছিলেন না। গত ১০ নভেম্বর থেকে হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।