‘মা, টিভি বন্ধ করো না’ বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় জুবায়ের। সাত বছরের শিশুটি বাবার সঙ্গে বাড়ির কাছের মসজিদে যাবে নামাজ আদায়ে। ফিরে এসে আবার বসে যাবে টিভির সামনে। তাই টিভি বন্ধ করেননি মা। কিন্তু মিনিট বিশেক পরই মা জানতে পারেন সেই হৃদয়বিদারক খবর, তার নাড়িছেঁড়া বুকের মানিক আর টিভি দেখতে আসবে না। একমাত্র সন্তান কখনোই আর ফিরবে না বাসায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় শুক্রবার রাতে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে নাম আছে শিশু জুবায়েরের। বিস্ফোরণের পর জুবায়েরের মা রাহিমা খাতুন জানতে পারেন, তার ছেলে যে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেছে, সেখানে আগুন লেগেছে। পাগলের মতো মসজিদের দিকে ছুটে যান তিনি। গিয়ে দেখেন মসজিদ বিধ্বস্ত। সেখানে লুটিয়ে পড়েছে তার স্বপ্নসাধ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে মা রাহিমা জানতে পারেন, তার ছেলে আর স্বামীকে নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, এই হাসপাতাল থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকায়। ভর্তি করা হয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। রাত ১০টার পর রাহিমা আসেন ঢাকায়। তখন আগুনে পুড়ে যাওয়া আদরের সন্তান জুবায়ের আর স্বামীকে দেখতে পান তিনি।
এ সময় ছেলে জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলেন মা। মায়ের দেওয়া এক ঢোঁক পানি পান করে জুবায়ের। এরপর রাত একটার দিকে মারা যায় সে। জুবায়েরের বাবা জুলহাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
জুবায়ের মা-বাবার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকত। তার বাবা জুলহাস ফরাজি নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। একমাত্র সন্তানের লাশ নেওয়ার জন্য মা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে বসে আছেন।
রাহিমা বলেন, ‘আমার বুকের ধন আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেল? আমার সোনার সংসার তছনছ হয়ে গেল।’ তাকে কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর। কে দেবে তাকে সান্ত্বনা?