আফগানিস্তানের বিয়ের কার্ড কিংবা কবর, মেয়েদের নাম থাকে না কোথাও। এখানে মেয়েদের পরিচয় শুধুই— কারও মা, কারও মেয়ে, কারও বোন কিংবা কারও স্ত্রী। তিন বছর আগে ওসমানির তোলা সেই প্রশ্নের ‘জবাব’ মিলেছে অবশেষে। আফগান তরুণীর দাবি ছিল, জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার পাশাপাশি মায়ের নামও থাকতে হবে। প্রস্তাব গ্রহণ করেছে আফগান সরকার। গত সপ্তাহে জনগণনা আইন সংশোধন করেছে তারা। তবে এখনও পার্লামেন্টে নয়া আইন পাশ হওয়া বাকি। সরকারি সূত্রের খবর, গ্রীষ্মের ছুটির শেষে পার্লামেন্ট চালু হলেই সেটাও হয়ে যাবে।
তবে মাঝের তিনটে বছর খুব মসৃণ ছিল না। ওসমানির সেই প্রশ্নে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সরব হন দেশবিদেশের লোক। আফগান তরুণীর কথায়, ‘‘দেশের জনগণনা আইন বিশেষ করে সেই সব মেয়েকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য, যাঁরা স্বামীবিচ্ছিন্না, যাঁরা যুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছেন কিংবা যাঁদের স্বামী নিখোঁজ। সম্পত্তির অধিকার কিংবা অভিভাবকত্ব, সবেতে কেন বঞ্চিত থাকবেন তাঁরা! কেন বাবার অনুপস্থিতিতে মা তাঁর সন্তানের পাসপোর্ট পর্যন্ত করাতে পারবেন না!’’ অনেকেই ওসমানির পাশে দাঁড়ান, বিরোধিতাও করেন অনেকে। কারণ যে দেশে মেয়েদের নাম মুখে আনাও ‘অশালীন’, সে দেশে পরিচয়পত্রে মেয়েদের নাম ‘সমাজবিরোধী’।
আফগান পার্লামেন্টের ২৫০ সদস্যের মধ্যে ৬৮ জন মহিলা। কিন্তু এঁদের অনেকেই এখনও সন্তানের ‘অভিভাবক’ হতে পারেননি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারেন না পর্যন্ত!
যুদ্ধবিরতি, মার্কিন সেনা সরানো ইত্যাদি বিষয়ে শীঘ্রই তালিবানের সঙ্গে শান্তি-বৈঠকে বসতে চলেছে আফগান সরকার। তার মাঝে আইন সংশোধন যারপরনাই উল্লেখযোগ্য। পাঁচ বছরের শাসনে মেয়েদের পড়াশোনা, চাকরি, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল তালিবান। আফগান স্বেচাসেবী সংগঠন ‘উইমেন নেটওয়ার্ক’-এর চেয়ারপার্সন মেরি আকরামির কথায়, ‘‘ওসমানির চেষ্টা এবং সরকারের পদক্ষেপ— দুই-ই উল্লেখযোগ্য। মেয়েরা এখানে জন্ম থেকে পর্দার আড়ালে, মৃত্যুর পরেও আড়ালে থেকে যায়।’’
তবে আইন সংশোধন, আর সমাজ সংশোধনে ফারাক বিস্তর। ইরফান তালাশ নামে এক স্কুল পড়ুয়ার বিদ্রুপ, ‘‘এটাই যেন আফগানিস্তানের একমাত্র সমস্যা ছিল!’’ আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশেষজ্ঞ নাসরাতুল্লাহ হকপালের আবার বক্তব্য, ‘‘এ সব আসলে ইউরোপ আর আমেরিকাকে খুশি করার কৌশল।’’