পাবনা চাটমোহরের হাসিবুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে ছাত্র নের্তৃত্ব দিচ্ছেন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের খতবাড়ি গ্রামের শাহাদত হোসেন ও মরিয়ম দম্পতির বড় ছেলে হাসিবুর রহমান সুজন।কিশোর বয়সে ছুটির দিন গুলোতে বন্ধুরা যখন আড্ডা দিত, ঘুরে বেড়াতো হাসিবুর তখন অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে নিজের লেখা পড়ার খরচ যোগাড় করতেন। করতেন টিউশনিও। যে গনিতে পারদর্শী তার নিকট গনিত পড়তেন বিনিময়ে তাকে অন্য বিষয় পড়াতেন। শিক্ষকের প্রাইভেট ছাত্রদের একাংশকে পড়াতেন তিনি বিনিময়ে ঐ শিক্ষকের নিকট ফ্রি পড়ার সুযোগ পেতেন। তখন কি কেউ জানতেন এ হাসিবুর একদিন দেশের সুনাম বয়ে আনবে? হয়তো জানতেন না।

সেই হাসিবুর এখন মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ভিপি। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার ব্যানারে ভিপি নির্বাচিত হয়ে নেতৃৃত্ব দিচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। মালয়েশিয়া ছাড়াও আরো অনেক দেশের শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সেখানকার শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ে রাখছেন ভূমিকা। শির্ক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। দিচ্ছেন দিক নির্দেশনা, কর্ম সংক্রান্ত মোটিভেশন। হাসিবুর জানান, একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার। খতবাড়ি গ্রামের একটি বেসরকারি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু কাল অধ্যয়নের পর ভর্তি হন খতবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশের পর ভর্তি হন জগতলা দাখিল মাদ্রাসায়। ২০১০ সালে জিপিএ পাঁচ পেয়ে দাখিল পাস করেন। চাটমোহর ডিগ্রী কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। ২০১৩ সালে জিপিএ পাঁচ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২০১৫ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমান মালয়েশিয়া। ইপিটমি কলেজ থেকে ২০১৭ সালে ডিপ্লোমা ইন বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জনের জন্য ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরের আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ায় (আই.আই.ইউ.এম) ব্যাচেলর অব হিউম্যান রিসোর্চ বিষয়ে ভর্তি হন। এখন শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিপি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন তিনি। মালয়েশিয়াসহ দশ-বারোটি দেশের প্রায় সাত হাজার ভোটার ভোট প্রদান করেন। ১৪ জন প্রতিদ্ব›িদ্বর সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বিভিন্ন ধাঁপ পেড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গত ১০ ফেব্রয়ারী ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভি.পি) নির্বাচিত হন।

হাসিবুরের এ অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেকের অবদান। তিনি অকপটে তা স্বীকার ও করেন। হাসিবুর আরো জানান, কিশোর কালে ছাত্রাবস্থায় পড়া শোনার টাকা জোগাড়ের জন্য ছুটির দিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করেছি। সময় নষ্ট করতাম না। কাজে, পড়ালেখায় সব সময় আমি অন্যদের চেয়ে ভাল করার চেষ্টা করেছি। এতে অনেকে আমাকে অহংকারি ভাবতো। কিন্তু আমি মোটেও তা ছিলাম না। আমার শিক্ষকরা সব সময় সহায়তা করেছেন। আমার পিতা মাতা অত্যন্ত দরিদ্র। আমার পিতাও শ্রম বিক্রি করতেন। এখনও করেন। আমি ইন্টার্নশীপ করছি। সাধ্য হলে দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের সহায়তা করার চেষ্টা করব। তিনি ছাত্র ছাত্রীদের সব সময় সময়ের সদ্ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
হাসিবুরের বাবা শাহাদত হোসেন জানান, কখনোই ছেলের প্রয়োজন পুরোপুরি মেটাতে পারিনি। এক বিঘা মাত্র জমি আবাদ করি। অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে তিন সন্তানকে মানুষ করতে হচ্ছে। মা মরিয়ম খাতুন জানান, টাকার জন্য কখনো মানুষের কাঁথা সেলাই করে দিয়েছি। হাঁস মুরগি পালন করেছি। ওদের পড়া লেখার টাকার জোগান দিতে ডিম না খেয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান সজীবও পড়া লেখা করছে। ওদের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখনও করতে হচ্ছে।

হাসিবুরের প্রতিবেশি মুজিবুর রহমান জানান, বাবা মায়ের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ছেলেটাকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। জগতলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক কামরুজ্জামান মিলন জানান, আমাদের ছাত্র মালয়েশিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত হয়ে ছাত্র নের্তৃত্ব দিচ্ছে এটি অবশ্যই গর্বের ব্যাপার।

 

 

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala