কুড়িয়ে পাওয়া ৫ ভরির নেকলেস ফেরত দিলেন রিকশাচালক

প্রতিদিনের মতো রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালেও রিকশা চালাতে বের হয়েছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে কুড়িয়ে পান পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণের হার। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে সাত লাখ টাকা। সেটি মালিকের কাছে ফেরত দিয়ে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অভাবের সংসারে বেড়া ওঠা রিকশাচালক দিগন্ত কুমার দাস।

সিনিয়র রিপোর্টার: আবুসালেহ তুহিন

রিকশাচালকের মহানুভবতার পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন দিগন্ত কুমার। দিগন্ত কুমার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের গুরুপদ দাসের ছেলে। তার মা-বাবা দুজনই প্রতিবন্ধী। শহরের আড়পাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে মা-বাবাকে নিয়েই থাকেন দিগন্ত।

এ ঘটনায় স্বর্ণের নেকলেসের মালিক সিঙ্গাপুর প্রবাসী রাশেদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদেশে থাকতেই স্ত্রীকে এই নেকলেসটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম। রোববার সকালে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রাম থেকে ঝিনাইদহ শহরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে কালীগঞ্জ শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে পৌঁছালে অজান্তেই স্ত্রীর গলায় থাকা সাড়ে পাঁচ ভরি ওজনের নেকলেসটি গলা থেকে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর টের পেয়ে সেটি খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। কিন্তু কোন স্থানে পড়েছে সেটি নির্দিষ্ট জানা ছিল না। এত টাকা দামের স্বর্ণের নেকলেসটি হারিয়ে তখন সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, এরপর শহরে মাইকিং ও বিশ্বস্ত অনলাইন প্লাটফর্ম ‘কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা’ গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর রিকশাচালক দিগন্ত কুমার দাস তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নেকলেসটি ফেরত দেন। রিকশাচালকের এই মহানুভবতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। উপহার হিসেবে তাকে একটি মোবাইল ফোন দিয়েছি।

রিকশাচালক দিগন্ত কুমার দাস ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি কালীগঞ্চ শহরে ভাড়ায়চালিত রিকশা চালান। বাবা প্রতিবন্ধী ও মা গৃহিণী। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় সেটি দিয়েই সংসার চলে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে একটি সোনার নেকলেস পড়ে পান। এরপর তিনি ফেরত দেওয়ার জন্য প্রকৃত মালিক খুঁজছিলেন। মাইকিং শুনে তিনি প্রকৃত মালিককে ফেরত দিয়েছেন। নেকলেসের মালিক তাকে একটি মোবাইল উপহার দেন।

তিনি আরও জানান, ওই স্বর্ণের নেকলেসটি পাওয়ার পর প্রথমে একটু বিস্মিত হয়ে পড়ি। যতক্ষণ ওই নেকলেসটি তার কাছে ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত তার ভেতরে একরকম অস্থিরতা কাজ করছিল। যখন মালিকের কাছে নেকলেসটি ফেরত দেন তারপর থেকে তার নিজের ভেতরে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। নেকলেসটি ফেরত দেওয়ার পর থেকে ফেসবুকে তাকে নিয়ে লেখালেখি দেখে খুবই ভালো লাগছে তার।

কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের অ্যাডমিন শাহরিয়ার আলম সোহাগ বলেন, স্বর্ণের নেকলেসের মালিক সিঙ্গাপুর প্রবাসী রাশেদ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার পর স্বর্ণের নেকলেস হারানোর একটি পোস্ট গ্রুপে দেওয়া হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর প্রবাসী রাশেদ ফোনে বলেন, এক রিকশাচালক সেটি ফেরত দিয়েছেন। দিগন্ত কুমার দাসের সংসারে এত অভাব থাকতেও সে যে সততা দেখিয়েছেন। এটা সত্যিই সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু আজিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি দিগন্ত কুমার দাস ছেলেটি পরিশ্রম করে, অন্যের রিকশা ভাড়াই চালিয়ে কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে। অথচ সে চাইলে স্বর্ণের নেকলেসটি আত্মসাৎও করতে পারতো। কিন্তু রিকশাচালক হয়েও তার নিজের বিবেকের কাছে তিনি একজন সৎ। যার কারণে প্রকৃত মালিকে তার স্বর্ণের নেকলেসটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। দিগন্ত অনেক ভালো একটা কাজ করে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন, যে অভাবে থাকলেও কীভাবে সৎ থাকা যায়।

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala