ইউএনওর ওপর হামলা সেই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সদ্য সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডল আসামির উপস্থিতিতে ২৯ ডিসেম্বর মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য করেন।

আদালতের পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন ও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ্ দোরখ শান্ (এডমিরাল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শাহ্ দোরখ শান্ বলেন, দুপুরে আসামি রবিউল ইসলামকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবী শহীদুর রহমান জামিনের আবেদন করেন। বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডল জামিন নামঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে আগামী ২৯ ডিসেম্বর তারিখে মামলার চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য করেন। পরে আসামিকে পুনরায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এর আগে তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমলি আদালত-৭ (ঘোড়াঘাট) এ মামলার সমস্ত নথিপত্র জমা দেন। পরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারিক কার্যক্রম ও নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠান।

আদালতে আসামি রবিউল। 

আদালতের পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, গত ২১ নভেম্বর রবিউল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন গোয়েন্দা শাখার ওসি ইমাম আবু জাফর।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, এই মামলার সবদিক বিবেচনা করে এবং নিশ্চিত হওয়া গেছে ঘটনার একমাত্র পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারী রবিউল ইসলাম। এজন্য তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্য যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো, কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগপত্রে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, আলামত হিসেবে ব্যবহৃত লাঠি, হাতুড়ি, ফরেনসিক রিপোর্ট, এমই রিপোর্ট, ফোন, নগদ ৪৫ হাজার টাকাসহ ৩১টি আলামত থাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগপত্রে ৫৩ জনকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ জন ইতিমধ্যেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলায় প্রায় পৌনে ৩ মাস সময়ে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি রবিউল ইসলাম জেলা প্রশাসকের ফরাস পদে চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থাতেই তিনি ক্রিকেট জুয়া, বাজি ধরা ও ক্রাইম পেট্রোল দেখার আসক্তিতে পড়ে যান। এসব নেশায় পড়ে কাজে মনোযোগ দিতে পারতেন না। ফলে তাকে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো। এরই ধারাবাহিকতায় কাজে অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য তাকে শাস্তিস্বরূপ ঘোড়াঘাটে বদলি করা হয়। সেখানেও রবিউল জুয়া ও বাজি ধরার জন্য ঋণ ও দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

পাওনাদারদের টাকার চাপে রবিউল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। চাপ সহ্য করতে না পারায় গত ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন। পরে চাকরির কোন ক্ষতি হবে না -এই শর্তে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে রবিউল ইসলাম। এরপরও রবিউলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, জুয়ায় অভ্যস্ততা ও বাজি ধরার ফলে আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ততা, ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করার ফলে জরিমানা প্রদান, অপেশাদারিত্বের জন্য বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কার করা এবং পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা ও পারিবারিক অশান্তির কারণে রবিউল এই হামলার পরিকল্পনা করে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে সরকারি ডাকবাংলাতে ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টারে জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওইদিন সন্ধ্যায় ইউএনও ওয়াহিদার ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে ও ঘোড়াঘাটের ইউএনও বাসভবনের সাবেক কর্মচারী রবিউল ইসলামকে আটক করা হয়। পরে ২০ সেপ্টেম্বর নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রবিউল। পরে এই মামলার সাথে সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফরেনসিক রিপোর্ট, ব্যবহৃত হাতুড়িসহ ৩১টি আলামতের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় এই ঘটনার সাথে একমাত্র রবিউল ইসলামই জড়িত।

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala

Buy,Sale,Rent Property in Dhaka Bangladesh at ghorbareewala

Visit Ghorbaree Wala